বিভক্তি কাকে বলে? বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি

বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল বিভক্তি। প্রায় পরীক্ষায় বিভক্তি কাকে বলে প্রশ্নটি এসে থাকে এই পোস্টে বিভক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে
বিভক্তি কাকে বলে

বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল বিভক্তি। প্রায় বিভিন্ন পরীক্ষায় বিভক্তি কাকে বলে এই প্রশ্নটি এসে থাকে তাই বিভক্তি সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন তাই এই পোস্টে বিভক্তি কাকে বলে? বিভক্তি কয় প্রকার, বিভক্তির কাজ কি ইত্যাদি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বিভক্তি কাকে বলে

যে সকল বর্ন বা বর্ন সমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদ গঠন করে এবং একটি পদের সাথে অন্য একটি পদের সম্পর্ক স্থাপন করে সেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে বিভক্তি বলে ।

বিভক্তি উদাহরণ

রাহুল টুম্পাকে একটি পেন দিল। এখানে টুম্পা শব্দটির সঙ্গে কে বিভক্তি যুক্ত হয়েছে যার এবং বাক্যটির প্রত্যেকটি পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

বিভক্তির আরো কয়েকটি উদাহরণ হলো -
আমি স্কুলে যাই - এখানে স্কুল শব্দটির সাথে এ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
গাছ থেকে পাতা পড়ে - এই বাক্যে থেকে বিভক্তিটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও - এখানে ভিক্ষুক শব্দটির সাথে কে বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

বিভক্তির কাজ

  • বিভক্তি বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে পদে পরিণত করে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে।
  • বিভক্তি কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • বাক্যে ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধাতুকে ক্রিয়াপদে পরিণত করে ক্রিয়ারকাল নির্ণয়ে সাহায্য করে।

বিভক্তি কয় প্রকার ও কি কি

বাংলা ভাষায় বিভক্তি দুই প্রকার যথা
1. শব্দ বিভক্তি
2. ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি

শব্দ বিভক্তি কাকে বলে

যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটিকে নামপদে পরিণত করে বাক্যে ব্যবহারের যোগ্যতা দেয় তাকে শব্দ বিভক্তি বলে। যেমন অ, এ, এর, রা, কে, তে, এতে ইত্যাদি।

শব্দ বিভক্তির উদাহরণ

সে স্কুলে যায় (স্কুল + এ = স্কুলে
) এখানে এ বিভক্তিটি স্কুল শব্দটির সাথে যুক্ত হয়ে শব্দটিকে পদে পরিণত করে বাক্যে স্থান লাভের যােগ্যতা দান করেছে। যেমন: স্কুল + এ = স্কুলে

শব্দ বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি

শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। সেগুলি হল যথা-
প্রথমা বা শূন্য বিভক্তি - শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তি থাকে। যেমন: আমি ভাত খাই
দ্বিতীয়া বিভক্তি - কে, রে বিভক্তি থাকে। যেমন: সে আমাকে একটি কলম দিয়েছে
তৃতীয়া বিভক্তি - দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক বিভক্তি থাকে। যেমন: রহিম মাছ দিয়ে ভাত খাই।
চতুর্থী বিভক্তি - এখানে বিভক্তি থাকে রে, কে। যেমন: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও
পঞ্চমী বিভক্তি - এখানে চেয়ে, থেকে, হইতে, হতে বিভক্তি থাকে। যেমন: আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে।
ষষ্ঠী বিভক্তি - এখানে র, এর বিভক্তি থাকে । যেমন: আমার বাড়ি যেতে হবে।
সপ্তমী বিভক্তি - এ, য়, তে বিভক্তি থাকে। যেমন: তিলে তেল হয়।

শূন্য বিভক্তি কাকে বলে

যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে অপ্রকাশিত থেকে শব্দকে পদে পরিণত করে তাকে শূন্য-বিভক্তি বা প্রথমা বিভক্তি বলে।

রহিম স্কুলে যায় এই বাক্যে রহিম শব্দের সাথে শূন্য বিভক্তি বা ‘অ’ যুক্ত হয়েছে যা শব্দের সঙ্গে অপ্রকাশিত রূপে যুক্ত রয়েছে।

বিভিন্ন কারকে শূন্য বিভক্তির উদাহরণ

কর্তৃকারকে শূন্য-বিভক্তি - শ্যামল স্কুলে পড়ে, বৃষ্টি পড়ছে, পাখি ডাকে, রাম বাজারে যায়, 
কর্মকারকে শূন্য-বিভক্তি — শিশু চাঁদ দেখে, সে বই পড়ে, কথা শােনাে, সবাই গল্প শুনছে।
করণকারকে শূন্য-বিভক্তি — ছেলেরা মাঠে কাবাডি খেলছে। এখন ফুটবল খেলছাে কেন?
অপাদান কারকে শূন্য-বিভক্তি — স্কুল পালিয়ে কোথায় ছিলে? ট্রেন হাওড়া ছাড়ল
অধিকরণ কারকে শূন্য-বিভক্তি — তুই আজ স্কুল যাবি না? এখন বাবা বাড়ী নেই।

ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে

যে বিভক্তি গুলি বাক্যে ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি বলে । যেমন – ই ,এ ,ছে ইত্যাদি ।

ধাতু বিভক্তি উদাহরণ

অতীত কালে: তে, তাম, এ ছিল, এ ছিলাম, এ ছিলে শব্দের সাথে যুক্ত হয়।
বর্তমান কালে: অ, ই, এ, ছ, ছি, ছে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ভবিষ্যৎ কালে: ব, বে সন্ধ্যের শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ধাতু বিভক্তি কাল ও পুরুষভেদে নানা পক্ষে নানা রূপের ব্যবহৃত হয়
বর্তমান কাল অতীত কাল ভবিষ্যৎ কাল
উত্তম পুরুষ আমি খেলি আমি খেলেছিলাম আমি খেলব l
মধ্যম পুরুষ তুমি খেল তুমি খেলেছিলে তুমি খেলবে
নাম পুরুষ সে খেলে সে খেলেছিল সে খেলবে

মৌলিক বিভক্তি কাকে বলে

যে সকল বিভক্তি অন্য কোন বিভক্তি থেকে উৎপন্ন হয় না তাকে মৌলিক বিভক্তি বলে। যেমন: কে, রে, র প্রভৃতি।

বাংলা ব্যাকরণে মোট পাঁচটি মৌলিক বিভক্তি আছে।
সেগুলি হল যথাক্রমে- কে, রে, র, এ, তে। এই পাঁচটি বিভক্তি থেকে অন্য আরো অনেক বিভক্তি তৈরি যায় যেমন- কে > একে/দিগকে, রে>এরে, র>এর/দের/কার , এ>য়, তে>এতে প্রভৃতি। ইত্যাদি।

সাধিত বিভক্তি কাকে বলে 

যে সকল বিভক্তিগুলি অন্য কোনো বিভক্তি থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে সাধিত বিভক্তি বলে।

তির্যক বিভক্তি কাকে বলে

সংস্কৃত ভাষায় সুনির্দিষ্ট করা রয়েছে যে কোন কারকে ও কোন পুরুষে কোন বিভক্তি প্রযুক্ত হবে কিন্তু বাংলা ভাষায় সংস্কৃতের মতো কোন কারকে কি বিভক্তি প্রয়োগ করা হবে তা নির্দিষ্ট করা নেই। বাংলা ভাষায় বেশিরভাগ বিভক্তি বেশিরভাগ কারকে প্রযুক্ত হতে পারে অর্থাৎ তির্যক বিভক্তি হলো - যে বিভক্তি একাধিক কারকে বা একের বেশি কারকে প্রযুক্ত হয় তাকে তির্যক বিভক্তি বলে। কে, রে, র, এ, তে ইত্যাদি হলো তির্যক বিভক্তির উদাহরণ।

FAQ on বিভক্তি

বিভক্তি শব্দের অর্থ কি?
বিভক্তি শব্দের অর্থ হলো বিভাজন বা বিভাগ।

শূন্য বিভক্তির অপর নাম কি ?
শূন্য বিভক্তির অপার নাম প্রথমা বিভক্তি ।

বিভক্তি কত প্রকার ও কি কি?
বিভক্তি দুই প্রকার যথা: শব্দ বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্তি ।

শব্দ বিভক্তি কত প্রকার ?
শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার ।

বিভক্তি যুক্ত শব্দ বা ধাতুকে কি বলে?
বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতুকে পদ বলে।

কথোপকথনে যোগ দিন