বর্ষাকাল রচনা : ক্লাস 5, 6, 7, 8

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পোষ্টে বর্ষাকাল রচনা আলোচনা করা হলো। বর্ষাকাল প্রবন্ধ রচনা ক্লাস 5, 6 , 7, 8 এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্ষাকাল রচনা

ভূমিকা

বাংলার ঋতুচক্রে ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষা স্থান দ্বিতীয়। গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষাকাল আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। তবে বাংলায় বর্ষার প্রভাব ভাদ্র মাস পর্যন্ত থাকে। গ্রীষ্মের তীব্র তাপ ও উত্তাপের পর বর্ষার আগমনে, উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের প্রাণ জুড়ায়।

বর্ষার আবির্ভাব

ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষাকাল আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল তবে বাংলায় আরও কিছুদিন বর্ষা থাকে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপে মানুষ যখন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, পাছ-পালা যখন তাদের শ্যামলতা হারিয়ে রুক্ষ শুষ্ক হয়ে ওঠে ঠিক তখনই বর্ষার আগমন ঘটে হঠাৎ নীল আকাশের বুকে দেখা দেয় কালো মেঘ। মানুষ ও প্রকৃতি নবজন্ম লাভ করে। মৌসুমী বায়ুর কারণে বাংলায় বর্ষাকাল লক্ষ্য করা যায়। গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ু ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হিমালয়ের গায়ে বাধ প্রাপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত ঘটায়। 

প্রাকৃতিক রূপ

বর্ষা মানেই আকাশে কালো মেঘ কখনও ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আবার কখনও মুষলধারে বর্ষণ। গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যাওয়া গাছপালা আবার সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। শীতল বৃষ্টি মানুষের জীবনে শান্তি এনে দেয়। বর্ষাকালে সূর্য প্রায়ই দেখা যায় না। পুকুর, নদী-নালা, ডোবা জলে থৈ থৈ করে। গ্রামের মাটির রাস্তা কাদায় ভরে যায়। এইসময় কদম, কেতকী, দোলন, চাঁপা, কামিনী, জুঁই প্রভৃতি ফুলের গন্ধে চারিদিক ভরে ওঠে, রাতে ব্যাঙের কলরবে চারিদিক মুখর হয়ে বর্ষার আগমনে নির্জীব প্রকৃতি যেন জীবন ফিরে পায়।

উপকারিতা

বর্ষাকালে জনজীবন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়, চারিদিক শস্য শ্যামলায় ভরে উঠে। বর্ষাকাল কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে আশ্বাসের বার্তা বহন করে আনে। এইসময় বৃষ্টির ফলে কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ফলে কৃষকরা বিভিন্ন প্রকার ধান, পাট, সব্জির ফলন ঘটায় এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি ও ফল ফুল পাওয়া যায়। বর্ষায় পেয়ারা, আনারস, জামরুল ও জামের প্রচুর পরিমানে ফলন হয়। বর্ষার নতুন জলে মাছ এবং জলজ প্রাণীরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। জলস্তর বৃদ্ধির জন্য নৌপথে জাহাজ চলাচল সহজ হয়। সব মিলিয়ে প্রকৃতি নতুন রূপ ধারণ করে।

অপকারিতা

বর্ষাকাল যে শুধু মানুষের মুখে হাসি ফোটায় তা নয়, বর্ষায় মানুষের দুর্ভোগও বাড়ে। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে পথ-ঘাট ডুবে যায় এবং মাঝে মাঝে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বন্যা হলে ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু সবকিছু ভেসে যায় মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। বর্ষাকাল রোগ মহামারীর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, কলেরা, জন্ডিস, আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বর্ষাকালে মাঝে মাঝে ঝড় হয় এবং তাতে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়। গ্রামের মাটির ঘর ভেঙ্গে যায় ফসলেরও প্রচুর ক্ষতি হয়। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে যায় এবং গ্রামের পথে কাদা হয় বলে যাতায়াতে খুব অসুবিধা হয়।

দৈনন্দিন জীবনে বর্ষার প্রভাব

বর্ষা মানুষের জীবনকে দারুন ভাবে প্রবাহিত করে। বর্ষার সজল প্রাণবন্ত রূপ মানুষের বিরহী মনকে আরো কাতর করে তোলে বর্ষা বাঙালির মেজাজকে করে তোলে সরস ও কাব্যময়। বাংলার খাদ্যসামগ্রী, তার সমস্ত সম্পদ বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বর্ষমঙ্গল মতো উৎসবে বর্ষার বিশেষ অবদান রয়েছে।

উপসংহার

বর্ষার কারণেই আমাদের এদেশ সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা অনিন্দ্য সুন্দর হয়েছে। বর্ষা না থাকলে এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো। বর্ষার উপর আমাদের কৃষি ও গ্রামীণ জীবিকা নির্ভরশীল। বর্ষাকালে জলে কাগজের নৌকা ভাসানো, বৃষ্টির দুপুরে টাপুর টুপুর শব্দের মধ্যে বাড়িতে বসে লুডো খেলা, খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দ কম নয়। বর্ষা মানুষের মনে অনেকখানি শান্তি এনে দেয়। তাই নানান অসুবিধা সত্ত্বেও বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

কথোপকথনে যোগ দিন